হে ইংরেজ-রাজ, রাজাদের জাতি।
হে মহান সংস্কৃত, হে মহান সুসভ্য।
হে আলোর কণিকা হাতে সভ্যতার দিশারী।
হে ইংরেজ, হে অতিশয় সুবিবেচক।
হে রাজজাতি, হে পথপ্রদর্শক।
দেখো, তোমাদের দেখিয়ে দেয়া
পুরাতন স্বর্নপথেই কেবল হাঁটছি আমরা।
তোমাদের পথেই কেবল স্বর্ন ছড়ানো থাকে।
তোমরাই দেখিয়েছো...
কিভাবে পথে পথে স্বর্ন লুকানো থাকে...
তাই সে স্বর্নের খোঁজ...
আমরা এখনো ছাড়তে পারিনি।
পারবোও না।
তোমাদের আলোতেই, হে ইংরেজ-রাজ...
আমরা আলোকিত কেবল।
তোমরাই দেখিয়েছো, কোনটা আলো...
তোমরাই চিনিয়েছো, কোনটা মশাল...
তোমরা মহান সংস্কৃত!
তোমরাই জানো কেবল...
কিভাবে আলোক উৎপাদন করতে হয়!
আমরা এখনো তাই,
সেই আলোর মশাল ধরে...
ঠিক দাঁড়িয়ে আছি। দেখো...
হে ইংরেজ-রাজ, তোমরা জগতে বিখ্যাত।
তোমাদের কাছে শিখেছে পৃথিবী...
কিভাবে সুসভ্য হতে হয়...
আর না হলে, আমরাতো ঠিক,
ঠিক কাঁচা মাংস খেতাম।
তোমরা না বললে, আমরা এখনো...
রাস্তায় রাস্তায় ন্যাংটি পরে
ঘুরে বেড়াতাম।
আর উল্টা হয়ে নর্দমায় পরে
থাকতাম।
তোমরা মহান... তোমরা সুসভ্য...
তোমরাই শিখিয়েছো মহান সভ্যতা...
হে ইংরেজ-রাজ; তোমরা ফিরে এসো...
দেখো, তোমাদের স্বর্নপথে এখনো স্বর্ন গজায়
রোজ।
এখনো তোমাদের দেয়া মশাল নেভেনি।
এখনো তোমাদের চোখে আমরা সভ্যতা দেখি।
তোমাদের সাজানো বাগান, এখনো গোছানো...
এখনো অমলিন তার, ডাল-পাতা-ফুল-ফল...
আমরা বাঙালী জাতি, এখনো হাঁটতে শিখিনি।
তোমরা হাত ধরে আমাদের... হাঁটতে শেখাও।
হে পাকিস্তানি, হে পাক-স্থানি...
হে আর্য্য... হে উন্নত... হে সৌষ্ঠব...
হে দীর্ঘকায়... হে তীক্ষ্ণনাসিকা... হে পূতচরিত্র...
হে অধ্যাবসায়ী... হে নিয়মানুবর্তী...
দেখো...
তোমাদের নিয়মের অনুবর্তী আমরা।
তোমাদের লৌহদৃঢ় নিয়ম...
যেমন শৃঙ্খলিত করেছিলো,
ভার্তৃত্বে এবং সৌহার্দ্যে...
আমরা সে নিয়মের অনুবর্তী হয়ে,
এখনো নীতি বিসর্জন দিইনি।
আমরা এখনো ছাড়িনি তোমাদের আত্মা।
লোকে তাকে স্বৈরাচার বলে... বলুক।
তাদের বলতে দাও! যতোই বলুক...
আমরা আর তোমরাই জানি কেবল,
আমরা লৌহদৃঢ় নিয়মানুবর্তী।
জান্ দেবো জান্... কিন্তু ছাড় নয়।
তোমাদের দেখানো উন্নত চরিত্রে...
আমরা নিজেদের করেছি মহীয়ান।
আমরা দেখো এখনো, অধ্যাবসায় ছাড়িনি।
আমাদের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই।
জানি, তোমাদের মতোই,
যে কোনো সম্ভাব্য লক্ষ্যই হতে পারে...
আমাদের লক্ষ্য।
তাই বৃথা একটি লক্ষ্যে দৌড়ে লাভ
নেই।
তোমরাই দেখিয়েছো, হে মহান...
জাতির সংবিধান থাকতে নেই...
থাকলেও তাকে রাখতে হয়, পায়ের তলায়।
হে আর্য্য... হে উন্নত... হে পূত...
তোমরাই দেখিয়েছো, পবিত্রদের শাসন...
তোমরাই দেখিয়েছো, উন্নতদের শাসন...
সমস্ত চরম অলঙ্ঘনীয় সত্যের মতো...
গনগনে... দগদগে... জ্বলজ্বলে...
এখনো ঠিক স্পষ্ট জ্বলে রয়,
উন্নতদের শাসন; পবিত্রদের শাসন।
তোমরাই শিখিয়েছো, হে মহান...
কিভাবে জনগণ, পূত আর উন্নতদেরই
বেঁছে নেয়... নোংরাদের মধ্য থেকে।
যারা নোংরা, তারাতো বোঝেইনি কোনোদিন...
শাসন কি?
হে পূত-পবিত্র... হে পাক-স্থানী...
তোমরা ফিরে এসো। দেখো...
তোমাদের ছাউনি এখনো তোমাদেরই আছে।
কেবল শব্দ বদলালেই কি হয়?!
তোমাদের আর্য্য শাসন এখনো বলবৎ...
তোমাদের নিয়মানুবর্তীতা,
এখনো বহাল তবিয়ৎ।
তোমাদের মতো করে, আমরা ভাবতে ভালোবাসি...
আমরা বাঙালী জাতি। এখনো লম্বা হইনি।
লম্বারাই উন্নত এবং উন্নতদেরই শাসন
করা উচিত।
নোংরামি যাদের ভেতরে এবং বাহিরে,
তারা শাসনের কিছু বোঝে নাকি?
তাই তোমরাই ফিরে এসো, হে উন্নত...
এবং উন্নতদের শাসন প্রতিষ্ঠা করো।
হে ইংরেজ-রাজ... হে পাক-স্থানী...
তোমরা ফিরে এসে...
আমাদের নেতাদের ঘাড়ে চেপে বসো...
তাতে আমাদের ভাগ্যোন্নয়ন হবে কি?
আমরা বাঙালী জাতি, শিশুবৎ...
এখনো দুগ্ধপোষ্য... ন্যাওটা...
শোষণ আমাদের জন্মগত অধিকার।
শোনো হে মহান এবং উন্নতগণ...
এখনো আমাদের নেত্রীদের ঘাড়ে চেপে
বসে,
মধ্যযুগীয় রানী ভিক্টোরিয়ার প্রেতাত্মা।
এখনো আমাদের নেতাদের মগজে বাস করে,
জিন্না সাহেবের, হতেই হবে; হবেই হবে, টুপি।
আমরা যেনো আছি এক...
সব পেয়েছির দেশে।
আমরা বাঙালী জাতি, এখনো
তৃণবৎ...
ঘরে হাতি চুরি হলে, চকলেট চুষি।
আমরা অত্যন্ত সুবোধ, প্রতিবাদ
করিনা...
আমরা অত্যন্ত সহ্যশীল, প্রতিরোধ
করিনা...
তোমরাই ফিরে এসো, হে উন্নত
জাতি...
আমরা প্রতিরোধ করতে শিখিনি
এখনো।
আমাদের এই দেশে...
এক মহান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া
চালু আছে।
এখানে আমরা সবাই,
পাঁচ বছরে একবার ভোট দেই।
এবং তারপর দুই আঙুল তুলে...
বিজয়চিহ্ন দেখিয়ে বলি...
গণতন্ত্রের চাকা লাইনেই আছে।
আমাদের ভোট আমরা দেই...
যাদের খুশি তাদের দেই...
যাদের দেই, তারাও খেয়ালখুশি
মতো...
আমাদের দিয়ে যান...
এবং মহান-সুসভ্য গণতান্ত্রিক
চাকা,
লাইনেই রাখেন।
এবং আমাদের সরকারী দল-
বিরোধীদল...
সর্বদা প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত
থাকেন...
কে কার চেয়ে বেশি উন্নয়ন করবেন!
তারা পালাক্রমে মসনদে আসেন...
এবং উন্নয়ন করেন।
তারা বিশ্বাস করেন,
ব্যক্তি সমাজের অংশ।
তাই ব্যক্তির উন্নয়নের মাধ্যমেই
সমাজের সর্বাঙ্গীন উন্নয়ন
সম্ভব।
তাই তারা পরস্পর...
সুস্থ প্রতিযোগীতায় লিপ্ত
থেকে...
দেশকে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে নিয়ে
যান...
উন্নয়নের পথে।
এবং আমাদের সুশীল সমাজ...
অনেক আগেই মস্তিষ্ক বন্ধক রেখে
বসে আছেন।
তারা তাদের কেবলা ঠিক করে
নিয়েছেন।
প্রাচ্য-প্রাতীচ্য কেবলামুখী না
হলে...
উন্নয়ন সম্ভব নয়...
তারা সকলের চেয়ে ভালো বোঝেন।
প্রাচ্য-প্রাতীচ্যের লেজ ধরে প্রায়ই
তারা আমাদের নিয়ে যান...
উন্নয়নের দোরগোড়ায়।
এবং আমাদের গণযোগাযোগ...
বহু পূর্বেই পশ্চাৎদেশ বিক্রি
করে দাঁড়িয়ে আছে।
এবং তারা সেখানে করে নিয়েছে
হলুদ রং...
যেনো তাদের সহজেই চিহ্নিত করে
যায়।
যেনো সাধারণের মধ্য হতে,
তাদের আলাদা করা যায়।
তারা অসাধারণ তাদের হলুদ রঙের
জন্যই।
হলুদকে তারা নিয়ে গেছে রাজকীয়
শীর্ষে।
এবং আমাদের অসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ...
মশাদের মতো রক্ত খেয়ে,
জীবন নির্বাহ করে থাকে।
রক্ত খেলেই কেবল তাদের
তাপমাত্রা ঠিক থাকে।
ঠিক মশাদের মতো। এবং তারা,
কাদের রক্ত খাওয়া হবে, তা ঠিক
করে দেন।
যারা দিতে চায় তারা স্বেচ্ছায়,
তাদের রক্ত দিয়ে যান এখানে।
এবং রক্ত চুষে খাওয়ার
মাধ্যমেই...
তারা এই অবহেলিত জাতিটিকে,
আলোর পথে নিয়ে যেতে চান।
তারা চান কেউ যেনো এতো রক্ত না
দেয়।
অথচ বিচিত্র, এই লাইনেই বেশি
লোক।
সর্বোপরি, তারা দেশের এবং জাতির
মঙ্গলের চিন্তায়,
এতো বেশি নিমগ্ন থাকেন...
অনেকে মহান রক্তজীবী খেতাবও
পেয়ে যান।
এবং আমাদের আইন পরিষদ...
এক বিচিত্র চিড়িয়াখানা...
বাঘের বদলে পুষি গিনিপিগ।
তারা কেউ উচ্চবংশজাত... কেউ
পুতুল...
কেউ নিজেকে ডাকেন জনপ্রতিনিধি
বলে।
অথচ মন দিয়ে খুঁজলে ঠিক পেয়ে
যাবেন...
পেছনে একটা লেজ বা নাকে একটু
শুল।
আমাদের আইন পরিষদে,
নানান জাতের আইনস্থাপনকারীগণ...
সারাবছর নানান পদের আইনস্থাপনে
ব্যস্ত থাকেন।
এমনকি নিজের জন্য বরাদ্দকৃত
সময়টুকু সহ।
এবং সবাই নানান কাজে ব্যস্ত
থেকে,
এই নিরীহ জাতিটিকে...
উদ্ধারের চিন্তা করেন।
সফলতাতো একটি সাময়িক-ভ্রান্ত...
অতিপ্রাকৃত ধারণা মাত্র।
এবং আমাদের মন্ত্রণা পরিষদ...
একটি জীবন্ত সার্কাস পার্টি।
গ্রাম্য অথচ অসাধারণের মতো।
তারা সবাই সবসময়,
আলোর নিচে থাকতে চান।
এবং তারা প্রত্যেকেই তেলের খনি-কারখানা।
ব্যক্তিগতভাবে সবাই সরাসরি উৎপাদনে
নিযুক্ত।
প্রতিনিয়তই তারা উর্দ্ধপানে সরবরাহ
করে যাচ্ছেন...
তেল। নানা জাতের তেল... নানান পদের তেল...
তেল অর্থাৎ স্নেহ, বেশ উপকারী।
তাইতো দেশ প্রায়ই ভেসে যায়...
অলৌকিক সমৃদ্ধিতে।
এবং আমাদের বিচারালয়...
কবরস্থানের ন্যায়। শুনশান... পক্ষপাতহীন...
কালোকোট পরে তারা সবসময়...
মিথ্যা আর মন্দের জন্য শোকপালন করেন।
একটি স্বাধীন বিচারালয়...
আমরা অনেক আগেই প্রতিষ্ঠা করেছি।
তারা স্বাধীনভাবে নিজনিজ দলের...
পক্ষ অবলম্বন করেন।
সবার উপরে দল সত্য...
তাহার উপরে নাই...
দলাদলির মাঝে কালোকোট তুমি...
নিজদলকে দিও ঠাই...
এবং আমাদের সচিবালয়...
যেনো প্রাথমিক বিদ্যালয়...
শিক্ষার্থীরা রোজ সকালে উঠে ক্লাসে
যান।
শ্রেণীশিক্ষকের কথাই সেখানে আইন।
যদি কেউ শ্রেণীশিক্ষককে অপছন্দ করে...
তার মতের বাইরে ভিন্নমত দেয়...
তাহলে তাকে কর্তব্যপরায়ন শিক্ষক,
বিশেষ কর্তব্য দিয়ে শ্রেণীকক্ষ থেকে
বের করে দেন।
আর এভাবেই গড়ে উঠে জাতির স্তম্ভ।
এবং আমাদের বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তর-পরিদপ্তর...
সংগ্রহে সমুন্নত জাদুঘর।
সেখানে মাছে ব্যাপারে থাকে চিংড়ির
নমুনা।
সেখানে কৃষির ব্যাপারে থাকে লাঙল-গোবর।
সেখানে যুবকদের উন্নয়ন হয়...
সেখানে মহিলাদের উন্নয়ন হয়...
সেখানে শিশু-এতিম-বিধবা-বৃদ্ধ...
আর বঞ্চিতদের উন্নয়ন হয়...
সেখানে নৃগোষ্ঠীদের উন্নয়ন হয়...
আর এভাবেই একটি অনগ্রসর জাতি,
উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যায়।
এবং আমাদের বিভিন্ন কমিশন...
বিভিন্ন অশুভকে দমন করতে সদা তৎপর
থাকেন।
তারা সর্বদা শুভ’র সহযোগী...
এবং একদমই অশুভ বরদাস্ত করেন না।
যেকোনো বিষয় তারা সুচারুরূপে...
সম্পন্ন করতে সিদ্ধহস্ত।
তাইতো এই শিশুজাতি,
এখনো টিকে আছে...
বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে...
যেমনটা আর কেউ কোনোদিন দেখেনি।
আমরা অনেক ভালো আছি।
এর চেয়ে আরো ভালো থাকতে চাই।
তাই, তোমরাই ফিরে এসো...
হে মহান-উন্নত জাতিগণ।
আমরা বাঙালী জাতি...
এখনো শিশু... এখনো ধূলার মতো...
এখনো তৃণ-গুল্ম-পরজীবী।
তোমরাই ফিরে এসো... হে মহান।
শোষণ আমাদের জন্মগত অধিকার।
২৯.১২.২০১২
No comments:
Post a Comment