21 April 2017

বৃষ্টিঃ আশির্বাদ ও অভিশাপ

ঈশ্বর তার সমস্ত পানিপাত্র উপুর করে দিয়েছেন।
উজাড় করে দিয়েছেন, সব সাধনা তার সৃষ্টির তরে।
ভাবলেন মাথা গরম সৃষ্টি তার, প্রায়ই রেগে যায়।
রেগে মেগে ঈশ্বরকেও গাল দিতে ছাড়ে না।
উপর থেকে পানি ফেলে যদি রাগ কমানো যায়।

ঈশ্বর তার সমস্ত পানিপাত্র উপুর করে দিয়েছেন।
ভেবেছেন সহজ সমাধান হবে তার সৃষ্টির।
পানি টাকি আশির্বাদ না অভিশাপ হয়ে এলো?
পল্টনের মোড়ে একজন ভিক্ষুক তার পরিবার সহ,
একটা ছিঁড়া পলিথিনের নিচে, মাথা গুঁজে।
ঈশ্বরের আশির্বাদ গ্রহনের স্বামর্থ তার নাই।

ঈশ্বর তার সমস্ত পানিপাত্র উপুর করে দিয়েছেন।
কমলাপুরের বস্তিতে শোরগোল পরে গেছে।
ঈশ্বরের আশির্বাদ তারাও নিতে পারল না।
এদিকে পাতিল ধরে তো ওদিকে পাতিল পরে।
গ্রীষ্মকালে জমে থাকা ময়লার স্তুপ থেকে
গন্ধ বেরোয়। বুঝতে পারেনা কোনটা আশির্বাদ!
পরিত্যক্ত বোতলে লাথি মেরে খেলে ফুটবল।

ঈশ্বর তার সমস্ত পানিপাত্র উপুর করে দিয়েছেন।
ঝর ঝর করে পানি ভেঙে পরতে লাগলো।
যে শ্রমিক আজ, কালকের চাল কিনে নাই্,
যার চারটা পিচ্চি সমেত পরিবার, বৌ বেকার।
জানালা দিয়ে উদাস চোখে, একবার রাস্তা দেখে।
আরেকবার আকাশের দিকে তাকায়। কি ভাবে?
যদি ঈশ্বরকে দেখা যেতো, সে বলতো- ‘ঈশ্বর
                পানি নয়, চাল দাও। ঈশ্বর।’

ঈশ্বর তার সমস্ত পানিপাত্র উপুর করে দিয়েছেন।
পানি প্রবাহ চাই মাঠের জন্য। নতুন বীজ।
কৃষক নতুন বীজ লাগিয়ে আকাশের দিকে তাকায়।
ঈশ্বর তার মনের কথা বুঝলেন, রাখলেন।
উপুর করে দিলেন পানিপাত্র। ভেসে গেলো।
সব কিছু ভেসে গেলো। মাঠ খাল বীজ।
মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো সৃষ্টি তার।
এতো পানিতো চাই নাই ঈশ্বর। হায় ঈশ্বর।
আর মাত্র পনের দিন লাগতো, ফসল ঘরে তুলতাম।

ঈশ্বর তার সমস্ত পানিপাত্র উপুর করে দিয়েছেন।
উপুর করে দিলেন। উপুর করে দিলেন।
সব ভেসে যাক। তার সৃষ্টি, অনাসৃষ্টি সব যাক।
সব কিছু ধুয়ে মুছে, চলে যাক অজানায়।
সব, সব কিছু ধুয়ে যাক। সব কিছু ।
কৃষক, শ্রমিক, ভিক্ষুক, পথচারী সব কিছু ।
সব ধুয়ে যাক। সব মুছে যাক। ঈশ্বর।
ঈশ্বর তো তাদের নন। তারা ঈশ্বরের নয়।
ঈশ্বর কার? কবির! ধনীর!! প্রেমিকের!!!

ঈশ্বরের পানিদানে যারা মুগ্ধ হতে পারে না,
যারা কবিতা লিখতে পারে না, যারা গান গায় না।
যারা বলে না,- ‘বাহ্ বৃষ্টি! বৃষ্টি আমার খুব ভালো লাগে।’
শুনে রাখো, তাদের জন্য এ বৃষ্টি।
ঈশ্বর তার পানিপাত্র উপুর করে দিলেন।


৩১.০৭.২০০৯
[এটি একটি কবিতার বই/২০১০]

No comments: