31 July 2017

বিশ্ববিদ্যালয়

চকচকে চোখ দেখে লোভ কোরো না।
ওরা তোমাদের গর্তে নিয়ে যাবে।
প্রবেশপথে রঙিন স্বপ্ন আঁকা...
এখানে ওখানে ছড়ানো থাকবে সাফল্যের ফুল।
শেষ পথে তোমরা পাবে সত্য...
সেখানে কোনো স্বপ্ন নেই...
সেখানে কোনো রঙ নেই...
সত্য নেই... সাফল্য নেই...
সত্যের শপথ করে ওরা তোমাদের নিয়ে যাবে...
মিথ্যার কাছে।

লোভাতুর লালা ফেলে বিভ্রান্ত হয়ো না।
ওরা তোমাদের চোরাবালিতে নিয়ে যাবে।
জ্ঞানের শপথ করে শেখাবে ভুল।
বলবে এখানে জ্ঞান পাওয়া যায়...
বলবে এখানে তথ্য পাওয়া যায়...
এখানে কোনো জ্ঞান নেই...
কোনো তথ্য নেই... কোনো ধারণা নেই...
এখানে আছে চাতুরী আর শঠতা...
শঠতায় যারা শীর্ষে, তারাই এখানে প্রদর্শক।

ওরা তোমাদের নিয়ে যাবে পাহাড়ের চূড়ায়।
তারপর ঠেলে ফেলে দিবে নিচে।
আর হাসবে... এটাইতো অভিজ্ঞতা...
এখানে কোনো অভিজ্ঞতা নেই...
এখানে আছে কাগজ...
এখানে আছে সংখ্যা...
এখানে আছে মূর্খতা...
মূর্খতা ঢাকার বেহায়া চেষ্টা।

ওরা তোমাকে দেখাবে চাঁদ...
দেখাবে ফুল... দেখাবে মধু।
জেনে রেখো... চাঁদের পিঠে তোমরা পাবে কঙ্কর...
ফুলের পেটে জীবাণু...
আর মধুতে পাবে বিষ।
এখানে জ্ঞানের শপথ করে শেখানো হয় মূর্খতা...
এখানে মূর্খরাই জ্ঞানী...
এখানে জ্ঞানের শপথ করে শেখানো হয় ধূর্ততা...
এখানে ধূর্তরাই জ্ঞানী।

আর ওরা তোমাকে শেখাবে বিবেক।
তোমার পিঠে ছুরি চালিয়ে...
ওরা তোমাকে শেখাবে বিবেক।
যারা তোমাকে বিবেক শেখাবে...
তারা নিজেরাই জড়যন্ত্র।
অনেক আগেই বিক্রি হয়ে যাওয়া মগজ...
আর অর্থের পাঁজরে বন্ধ হওয়া মনে...
ওরা তোমাকে শেখাবে বিবেক।
এখানে বিবেক মানে ছুরি চালানো...
এখানে বিবেক মানে পিঠ দেখানো...
বিবেক মানে পদলেহন... বিবেক মানে নির্লজ্জতা...
বিবেক মানে মিথ্যা আর মূর্খতা।

ওরা তোমাকে ছলনাময়ী রাক্ষসীর কাছে নিয়ে যাবে।
দিনের বেলায় যে রাজবধূর রূপ ধরে থাকে।
যথাসময়ে ঘাড় মটকে রক্ত চুষে খায়।
শিক্ষার শপথ করে ওরা তোমাকে শেখাবে...
দালাল হতে।
ওরা তোমাকে সাহায্য করবে দালাল হতে।
ওরা বলবে- জ্ঞানীরাই দালাল
আর দালালরাই জ্ঞানী।
ওরা তোমাকে কর্মী হতে বলবে।
ওরা তোমাকে কর্মঠ কর্মী হতে বলবে।
তোমার শ্রমে ওরা কেউ রাজবংশে যাবে।
যেমন অনেকের শ্রমে তুমি
দালাল হয়েছো... কর্মী হয়েছো...

ওখানে যেয়ো না।
চকচকে চোখ দেখে লোভী হয়ো না।
ওদের হাসিতে মেশানো আছে বিষ।
ওদের কথায় মেশানো আছে স্বার্থ।
ওদের মনে আস্তানা গেড়েছে কাগজ...
আর ওদের মগজে অর্থ।
কোমলমতিদের ওরা ধরে ধরে নিয়া যায়।
চকচকে চোখ দেখায়...
তারপর হ্যামিলনের বাঁশিঅলার মতো...
সারি ধরে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে।
ওরা সত্যের শপথ করে পাঠ করে মিথ্যা...
ওরা জ্ঞানের শপথ করে পাঠ করে শঠতা...

আর ওরা নিজেদের মনে করে মহান...
আর ওরা নিজেদের মনে করে সভ্য...
আর ওরা নিজেদের মনে করে বিবেকবান...
বিবেক তো ওরা বন্ধক রেখেছে মিথ্যায়।
সভ্যতা শঠতায় আর মহানতা মূর্খতায়।

ওরা কয়েকটা দালান গেড়েছে।
আর বলেছে এখানে জ্ঞান বিক্রি হয়...
আর বলেছে এখানে জ্ঞান বিলি হয়...
জ্ঞান এখানে তিন বেলা পাওয়া যায়।
বাতাসের মতো আর পানির মতো...

তোমাকে শুধু আসতে হবে...
মুখ হা করতে হবে...
বড়ি নিজে নিজেই হজম হবে।
এই বড়ি হজম করো না।
বড়িতে বিষ... বড়িতে মূর্খতা... বড়িতে শঠতা।
হজম হওয়ার পর তোমরা মোহে আচ্ছন্নের মতো...
দালাল হতে চাইবে... কর্মী হইতে চাইবে।
বড়িবিক্রেতা হতে চাইবে... বুদ্ধিজীবী হতে চাইবে।
সেই বড়ি হজম করো না...

এখানে দালানে কোনো স্বপ্ন নেই...
এখানে দালানে কোনো আশা নেই...
দালান ঘিরে আছে মিথ্যা মায়া।

১৯.০৩.২০১৪

29 July 2017

শব্দের দেবীর নিকট প্রার্থনা

জাদুকরী শব্দের পরপর বসে যাক...
যেভাবে তারা বসতে চায়...
শব্দেরা নিজেরা সাজুক।
যেভাবে সাজলে তাদের অপরূপা লাগবে...
সেভাবেই তারা সাজুক।

তারা বসুক নিজেদের মতো...
যাতে তারা হয়ে ওঠে আরো প্রাণবন্ত।
যেভাবে ইট পরপর বসে গিয়ে...
সাজিয়ে তোলে ইমারত...
সেভাবে শব্দরা তাদের ইমারত গড়ুক।
আর তারা নিজেদের সাজিয়ে নিক...
যেভাবে তারা নিজেদের সাজাতে চায়।
যেভাবে সজীব কোষেরা পরপর বসে গিয়ে...
গড়ে তোলে বৃহৎ জীবন্ত প্রাণী...
সেভাবেই জীবন্ত করুক, শব্দেরা নিজেদের।
শব্দেরা নিজেদের, স্বাচ্ছন্দ্যে করে তুলুক...
আরো প্রাণবন্ত।

শব্দেরা নিজেদের মতো করে এগিয়ে যাক
যেভাবে এগিয়ে যায় নদী...
শেষের খবর কি শুরু জানে,
বা শেষ কি জানে শুরু?
তবুতো নদীরা স্রোতস্বিনী হয়।
তবু প্রবাহিত হয় বছর বছর।
তেমনি শব্দেরা বয়ে চলুক...
নিজেদের মতো...
যেভাবে তারা চলতে চায়...
তারা জানবেনা কোনো শেষ বা শুরু।

শব্দেরা ফুটুক ফুলের মতো...
রঙীন, আরো রঙীন হয়ে ফুটুক।
যেভাবে ফুটলে তাদের অর্ঘ্যে দেয়া যায়...
দেবতার পায়।
কবিতারা ফুলের মতো ফুটুক...
পবিত্র হয়ে ফুটুক...
ঝরে যাওয়ার আগে যেন,
বীজ রেখে যায়...

কবিতারা চাঁদের মতো উঠুক...
বা না উঠুক, কখনো কখনো।
থাকলে হবে- আছে। আর...
না থাকলে হবে- ছিলো, আবার হবে।
উঠুক বা কখনো কখনো না উঠুক...
তবু তারা উঠুক, যখন যারা উঠতে চায়।

শব্দেরা সন্তান হোক...
যত্নে থাকুক সে কারিগরের কোলে।
সন্তানের মতো তারা মায়া ছড়াক...
যুগ থেকে যুগে।
তাদের ঘাটতি, তৈরী করুক হিংসা।

শব্দেরা মায়ায় পূর্ণ হোক...
শব্দেরা মমতা দিক...
দিকেদিকে মমতা দিক।
মমতার অভাবে তারা ছড়াক ভ্রান্তি।
শব্দের ভ্রান্তিতে জড়িয়ে যাক সমস্ত হিংসা।
যেখানে ভুল আছে, মিথ্যা আছে, দ্বেষ আছে...
শব্দেরা সেখানে শাসন করুক।
শব্দেরা শাসন করুক, সত্যযুগের মতো।
যে যুগে শব্দেরা সত্য ছিলো।

শব্দেরা সত্য হোক...
শব্দেরা ভালোবাসা দিক...
শব্দেরা পথ দেখাক...
আর তারা দিবে বাণী।
শব্দেরা পূর্ণ হোক, ঐশ্বর্যের পথে।
তারা নিয়ে যাবে যে পথে...
সে পথ সুগম করবে, বাণী।
আর তাকে বলা যাবে, শেষ গন্তব্য।

শব্দেরা ঝর্ণা হোক...
আর তারা তৈরী করুক সুর।
সে সুরে মুর্ছা যাবে, বর্তমান।
 সে সুর ঢেউ এর মতো...
একসাথে আলাদা।
শব্দেরা সবাই একসাথে আলাদা।
শব্দেরা আরো রূপবতী হোক।
নিজেরা সেজে থাকুক...
যেভাবে সেজে থাকে...
প্রকৃতি-প্রতিবেশ।

শব্দেরা আশীর্বাদ হোক...
সে এসে ধরা দিক, আমার হাতে।
শব্দের দেবী হও তুমি...
যেনো তুমি চাইলেই শব্দেরা জীবন্ত হবে।

০১.০৪.২০১৩

28 July 2017

তুমি ভোর, জীবনের মতো দীর্ঘ

তুমি ভোর হও
তুমি ভোরের আকাশ হও
তুমি ভোরের আকাশের মতো বিশাল হও
যে আকাশ আমাদের আগলিয়ে রাখে,
যে আকাশ আমাদের তার দিকে ডাকে,
সে আকাশের মতো তুমি...
বিশাল হও
তুমি ভোর হও

তুমি ভোরের মতো ফোটো
তুমি ভোরের আলোর মতো ফোটো
তুমি ভোরের আলোর মতো পবিত্র হয়ে ফোটো
যে ভোরের আলো ফুটে- চারদিক আঁকড়ে ধরে,
যে ভোরের আলো ফুটে- দশদিক ছড়িয়ে পরে,
সে ভোরের আলোর মতো তুমি...
পবিত্র হয়ে ফোটো
তুমি ভোরের মতো ফোটো

তুমি ভোরের মতো ছড়িয়ে যাও
তুমি ভোরের মেঘের মতো ছড়িয়ে যাও
তুমি ভোরের মেঘের মতো চঞ্চল, ছড়িয়ে যাও
যে ভোরের মেঘ, ছড়িয়ে গিয়ে- মুগ্ধ করে,
যে ভোরের মেঘ, ছড়িয়ে গিয়ে- স্নিগ্ধ করে,
সে ভোরের মেঘের মতো তুমি...
চঞ্চল, ছড়িয়ে যাও
তুমি ভোরের মতো ছড়িয়ে যাও

তুমি ভোরের মতো ফোটো
তুমি ভোরের রঙের মতো ফোটো
তুমি ভোরের রঙের মতো রূপ নিয়ে ফোটো
যে রঙ ছড়িয়ে গিয়ে- জগত রঙিন হয়,
যে রঙ ছড়িয়ে গিয়ে- জগত জোড়ালো হয়,
সে ভোরের রঙের মতো ফোটো তুমি...
রঙিন রূপ নিয়ে
তুমি ভোরের মতো ফোটো

তুমি ভোরের মতো ছড়িয়ে যাও
তুমি ভোরের বাতাসের মতো বয়ে যাও
তুমি ভোরের বাতাসের মতো বয়ে গিয়ে সুখী করো
যে বাতাস বয়ে গিয়ে স্নিগ্ধ করে,
যে বাতাস বয়ে গিয়ে সমৃদ্ধ করে,
সে ভোরের বাতাসের মতো তুমি...
বয়ে গিয়ে শান্ত করো
যে বাতাস বয়ে গেলে- পাপ ঝরে যায়,
যে বাতাস বয়ে গেলে-
প্রাণ বেঁচে থাকে আরো
সে ভোরের বাতাসের মতো তুমি...
বয়ে গিয়ে সুখী করো
তুমি ভোরের বাতাসের মতো বয়ে যাও
তুমি ভোরের মতো ছড়িয়ে যাও

তুমি ভোরের মতো দুলো
তুমি ভোরের পাতার মতো দুলো
তুমি ভোরের সবুজ পাতার মতো দুলো
যে দোলায় আমাদের, প্রাণে দুলে স্বপ্ন,
যে দোলায় আমরা- স্বপ্নে মগ্ন,
সে ভোরের পাতার মতো তুমি...
সবুজ হয়ে দুলো
তুমি ভোরের মতো দুলো

তুমি ভোরের মতো ওড়ো
তুমি ভোরের পাখির মতো ওড়ো
তুমি ভোরের চড়ুই পাখির মতো ওড়ো
যে চড়ুই রোজ ভোরে- মেলে দেয় ডানা,
যে চড়ুই পাড়ি দেয়- অশেষ অজানা,
সে ভোরের পাখির মতো তুমি...
অজানায় ওড়ো
যে চড়ুই দান করে- জন্মের সবটা,
যে চড়ুই ঝাপটায়- সাহসের ঝাপ্টা,
সে ভোরের পাখির মতো তুমি...
সাহসী, ওড়ো
তুমি ভোরের পাখির মতো ওড়ো
তুমি ভোরের মতো ওড়ো

তুমি ভোরের মতো ফোটো
তুমি ভোরের ফুলের মতো ফোটো
তুমি ভোরের ফুলের  মতো শ্বাশ্বত হয়ে ফোটো
যে ফুল আমাদের, বাঁচিয়ে রাখে দীর্ঘ,
যে ফুল আমাদের, প্রাণের মহার্ঘ্য,
সে ভোরের ফুলের মতো তুমি...
শ্বাশ্বত হয়ে ফোটো
তুমি ভোরের মতো ফোটো

তুমি পবিত্র হও
তুমি সত্য পবিত্র হও
তুমি শান্ত-সুখী, স্নিগ্ধ-পবিত্র হও
যে পবিত্রে আমাদের প্রবল আকুতি,
যে পবিত্রে আমাদের যৌথ সম্মতি,
সে পবিত্রের মতো তুমি...
সত্য হও
তুমি পবিত্র হও

তুমি জীবনের মতো দীর্ঘ হও
তুমি জীবনের পথের মতো দীর্ঘ হও
যে পথে হাঁটতে আমরা ক্লান্ত হইনা,
যে পথে হাঁটতে চাই, থামতে চাই না,
সে জীবনের পথের মতো তুমি...
দীর্ঘ হও
তুমি জীবনের মতো দীর্ঘ হও

তুমি ভোর হও
তুমি জীবনের মতো দীর্ঘ হও

০৮.০৮.২০১৩