30 March 2017

জাতিস্বর

ঈশ্বর বললেন- আমি তোমাকে অনুগ্রহ দিলাম
আমি আলোতে প্রবেশ করলাম
আমি কোনো বৃক্ষ বৃদ্ধ অশ্বত্থ
কি অপূর্ব ছিলো ঈশ্বরের অনুগ্রহ...
আমি মাথা ফুরে বেরুলাম... জগতে
কতো তথ্য, ভালোবাসা, বিজ্ঞান...
কতো তৃপ্তি, সুখ, বাস্তুসংস্থান...
মনোমুগ্ধকর আলোর রঙিন জগতে,
আমি ছিলাম এক বিচিত্র সৃষ্টি

ঈশ্বর বললেন- আমি তোমাকে অনুগ্রহ দিলাম
সেই পুরাতন মতে, আবারো...
আমি হলাম কোনো গায়ক পাখি
হিমালয়ের দেয়ালে দেয়ালে যার অদ্ভুত কণ্ঠ...
প্রতিধ্বনিত হতো... প্রতিদিনকার মতো
ঈশ্বরের অশেষ অনুগ্রহের আরাধনায়...
আমি প্রতিদিন লেজ উচিয়ে নাচতাম
আমি কৃতজ্ঞ ছিলাম...
ছিলাম এক ক্ষুদ্র পাখি
ঈশ্বরের অনুগ্রহে বন্দী... দোয়েল

ঈশ্বর বললেন- আমি তোমাকে অনুগ্রহ দিলাম
আরো সুচারু, সুনিপুনভাবে...
আমি জন্ম নিলাম, এক দক্ষ কারিগর
আটপা দাপিয়ে বেড়াতাম...
বুনতাম স্বপ্নের জাল...
চাওয়া আর না চাওয়ার নকশায়
আমি এক মাকড়শা,
বেঁচে ছিলাম একদিন
কতোই না আনন্দিত জীবন...
ঈশ্বরের অনুগ্রহ আমার হৃদয়ে...
রোজ রোজ আন্দোলিত হতো
আমি তাই বুনে চলতাম...
সাধ্যমতো

ঈশ্বর বললেন- আমি তোমাকে অনুগ্রহ দিলাম
বললেন- অংশ, তুমি সামাজিক হও...
অনুগ্রহে অধীর হৃদয় আমার...
ভাষা ফুটে উঠে
ঈশ্বরের অনুগ্রহে...
চকচক করে জ্বলতে থাকে চোখ
আমি হলাম একটি ছোটো লাল পিঁপড়া
বিশাল গোত্র আমার, আমি অধিষ্ঠাত্রী
একটি জনপদ, আমি গড়ে তুলেছিলাম
ধাত্রীরা সন্তান দেখভাল করতো, যত্ন নিতো
খাদ্যসংগ্রহকারীরা সংগ্রহ করতো খাদ্য
কৃষকেরা বীজ বুনে জন্মাতো ছত্রাক
নক্সাকারেরা করতো দালান-ঘর এবং রাস্তার নক্সা
শ্রমিকেরা ঝরাতো ঘাম, ন্যায্য দামে
আবহাওয়াবিদরা জনপদের হাওয়াকে,
করে তুলতো বাসযোগ্য, আরামদায়ক
গোয়েন্দারা খবর দিতো, সব ঠিকঠাক
আমার মনে আছে ঠিক,
পাশের গোত্রের সাথে ভগ্নীঘাতী যুদ্ধে,
সেবার প্রাণ দিয়েছিলো আমার,
দেশপ্রেমিক যোদ্ধারা তারা অমর...
সে মুখর জনপদ নিশ্চয় টিকে যাবে...
জন্ম-জন্মান্তর... হাজার বছর
আর ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে...
আমিও উপনীত হলাম... অক্ষয় জরাতে,
বার্ধক্য নাম
আমি ছিলাম কোনো মহান গোত্রের...
সমৃদ্ধ জনপদের নেত্রী

ঈশ্বর বললেন- আমি তোমাকে অনুগ্রহ দিলাম
তুমি আরো সাবধানী... সতর্ক হও
আমি তাই কান খাঁড়া করে আজ্ঞা হলাম
হলাম এক নিঃসঙ্গ বাদুড়
সতর্ক হতে গিয়ে অন্ধ হলাম
উলটে থাকতাম... সেই অশ্বত্থবৃক্ষের ডালে
মনে আছে সেই অশ্বত্থবৃক্ষের কথা?
আমাতেই আমি আশ্রয় নেই
আমি আমাকেই আশ্রয় দেই
সেই অশ্বত্থবৃক্ষ... হাতপা ছড়িয়ে রোজ,
রোদ পোহাতো... ছায়া পরতো নিচে
তার কি সুবিশাল ছায়া!
অন্ধকারের সতর্ক জীব আমি,
একইভাবে ঝুলে থাকতে থাকতে...
ঐশ্বরিক বাস্তুসংস্থানে, নিজেকে অন্তর্ভূক্ত করে...
দায়মুক্তি নিলাম কৃতজ্ঞ আমি...
ঈশ্বরের অনুগ্রহের দরজায়

ঈশ্বর বললেন- আমি তোমাকে অনুগ্রহ দিলাম
তুমি হও চঞ্চল, অথচ সুন্দর
আমি ঠিক হয়ে গেলাম...
কোনো চড়ুই পাখি
রোজ সকালে উঠে আমি,
অনুগ্রহের বিবিধ...
গুণগান গাইতাম

ঈশ্বর বললেন- আমি তোমাকে অনুগ্রহ দিলাম
আমি এইসব জঞ্জাল ফেলে হই...
একটি ধীর সরীসৃপ
ঠিক যতোটুকু... ঠিক যতোটুকু প্রয়োজন,
ততোটুকুই দিলেন তিনি
গড়িয়ে চলতাম আমি
নেই অপ্রয়োজনীয়, কোনো অতিরিক্তের বালাই
ছিলোনা উপাঙ্গ, ছিলোনা শ্রোত্র...
কি নির্বিকার-ধীর ছিলাম আমি
কি অলস ছিলাম...
শীতনিদ্রায় কাটিয়ে দিতাম...
দিনের পর দিন আমি ছিলাম সাপ
অসম্ভব ভীতু আমি, এড়িয়ে চলতাম...
সমস্ত অনাকাঙ্ক্ষিতদের
দায়দেনাদের পাশ কাটিয়ে আমিও...
নমিত ছিলাম অনুগ্রহে

ঈশ্বর বললেন- আমি তোমাকে অনুগ্রহ দিলাম
সাহসী এবং ক্ষীপ্র হও
বাতাসে ভেসে চলা আমি- প্রসন্ন প্রসহ
অনুগ্রহে ঊড়ুক আমার শক্ত ডানা
আমি হলাম শিকারী বাজ
উদাহরণ হয়তো আজো মিলবে...
যদি কেউ খুঁজে দেখতে চায়...
ঈশ্বরের অনুগ্রহে পুষ্ট,
প্রাকৃতিক ইতিহাস

ঈশ্বর বললেন- আমি তোমাকে অনুগ্রহ দিলাম
তুমি হও পরজীবী- উপকারী এক ক্ষুদ্র প্রাণ
আমি বাস করতাম প্রাণীদের অন্ত্রে
তাদের খাদ্যই ছিলো আমার খাদ্য
অথচ আমি না খেলে, তাদের হজম হতো না
আমি বেঁচে ছিলাম গর্বিত-উদ্ধত
অশেষ উপকারী আমি...
অথচ বিন্দুসম
ঈশ্বরের অনুগ্রহে আমি ছিলাম কোনো,
যেকোনো প্রকারের কৃমি
ধন্য হতাম আমি,
পরের উপকারে এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহে

তারপর ঈশ্বর বলতে থাকলেন-
হে অংশ, আমি তোমাকে ভ্রমণ করিয়েছি...
বিচিত্র থেকে বিচিত্র পথে
প্রকৃতির সমস্ত প্রশাখায়,
আমি তোমাকে ঘুরিয়েছি...
তুমি উপলব্ধি করেছো,
আমার অনুগ্রহ... আমার অস্তিত্বের মতোই
বিশাল এবং ব্যাপক।
সমস্ত অনুভূতিতেই তুমি পারদর্শী হয়েছো।
হয়েছো, পৌনঃপুনিক সময়ের ধাপ,
মহাজগতের একটি অংশ...
আমার অনুগ্রহে।
হে অংশ, আমি তোমাকে দিয়েছি অনুগ্রহ...
উপলব্ধির সব দরজা খুলে দাও...
যারা বন্ধ ছিলো এতোদিন।
অভিজ্ঞতার ঝুলিটি তুমি অনেক আগেই,
পূর্ণ করেছো। আমার অনুগ্রহে।
হে অংশ, আজ তুমি পূর্ণতা পেলে...
তুমি হলে, মহাজগতের সহযাত্রী।
এ মিশ্র-অভিজ্ঞতা সমন্বিত যাত্রার পর...
তুমি হয়ে উঠবে ঠিক,
ঠিক আমার অংশ।
এ সমস্তই ঘটেছে এবং আরো ঘটবে...
আমার, কেবল আমার অনুগ্রহে।
হে অংশ, তুমি রয়ে যাবে আমার সাথে...
এক চিন্ময় জগতে, এই সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের পর।

ঈশ্বর বললেন- আমি তোমাকে অনুগ্রহ দিলাম না
আমি হয়ে উঠলাম এক অব্যাখ্যীয় সত্ত্বা...
মানুষ!


২০.০৩.২০১১

No comments: